আব্বাসের বল সীমানাছাড়া করে তৃতীয়বারের মতো হেলমেট খুলে অনেকখানি দৌড়ে গেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। আকাশপানে ট্রেডমার্ক লাফটাও দিলেন আবার। তবে আগের দু’বারের চেয়ে এবার অনেক বেশি আবেগি হয়ে উঠেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এ ওপেনার। আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন, স্মিত হেসেছেনও। ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি বলেই হয়তো বাড়তি এ আবেগ। তিনি যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে ব্রায়ান লারার ৪০০ রানকেও নিরাপদ মনে হচ্ছিল না। কিন্তু স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও মার্ক টেলরকে টপকে ওয়ার্নার ৩৩৫ রানে পৌঁছার পরই ডিক্লেয়ার করে বসেন অসি অধিনায়ক টিম পেইন। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৩ উইকেটে ৫৮৯।
টিম পেইনের এই ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্তে অনেকেই বেশ অবাক হয়েছেন। লারার ৪০০ রানের রেকর্ডটা ভাঙার একটা সুযোগ তো দিতেই পারতেন তাকে। এমন সুযোগ তো বারে বারে আসে না। আর দিন শেষে ৯৬ রানে পাকিস্তান ৬ উইকেট হারিয়ে বসায় সে আক্ষেপটা হয়তো আরও বেড়েছে। ম্যাচ হয়তো তিন বা সাড়ে তিন দিনেই শেষ হয়ে যাবে। দুটি দিন হয়তো অব্যবহূত থেকে যাবে।
অথচ একটা সেশন দিলেই হয়তো টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার রেকর্ডের মালিক বনে যেতে পারতেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে ব্যক্তিগত কীর্তির চেয়ে দলকে প্রাধান্য দেওয়ায় অনেকে আবার পেইনের প্রশংসাও করেছেন। পেইন বলেছেন, ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত অংশ ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারও। তাছাড়া তিনি দলের জয়ের কথা চিন্তা করেছেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালু হওয়ায় এখানে পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এরপরও বেশ কিছু রেকর্ড করেছেন ওয়ার্নার। যেমন, অ্যাডিলেড ওভালের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস, দিবারাত্রির টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংস (দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি), টেস্ট ইতিহাসে দশম সর্বোচ্চ ইনিংস। তবে লারার রেকর্ড ভাঙা তার উদ্দেশ্য ছিল না বলে দিনের খেলা শেষে জানিয়েছেন ওয়ার্নার। চা-বিরতির ঠিক আগে আগে যে ইনিংস ঘোষণা করা হবে সেটা নাকি তিনি লাঞ্চের সময়ই জানতেন, ‘লাঞ্চের সময় ড্রেসিংরুমে আমি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কখন ডিক্লেয়ার করা হবে। আমাকে বলা হয় ৫.০০ বা ৫.১০ মিনিট। আসলে পেনি চেয়েছিল আমি যেন ৩৩৪ (ব্র্যাডম্যান ও মার্ক টেলরের সর্বোচ্চ ইনিংস) ছাড়িয়ে যাই।’
তবে সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলর বলেন, ‘আমার মতে ওয়ার্নারকে বিশ্বরেকর্ড করার সুযোগ দেওয়া যেত। সে রেকর্ডটি করলেও অস্ট্রেলিয়ার জয়ে খুব একটা সমস্যা হতো বলে আমার মনে হয় না। তিন দিন ও একটি সেশন হাতে ছিল। ডেভি (ওয়ার্নার) যে গতিতে রান করছিল, সে আর ঘণ্টাখানেক সময় পেলেই রেকর্ডটা করে ফেলত। আমার মনে হয় না এতে দলের স্বার্থে কোনো প্রভাব পড়ত। জয়ের ব্যাপারটা অবশ্যই সবার আগে। তবে ক্রিকেট একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক খেলা। এখানে ব্যক্তিগত রেকর্ডগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তারপরও জয়-পরাজয়ই সবার আগে।’
টেস্টে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস
ব্যাটসম্যান রান দেশ প্রতিপক্ষ সময়
ব্রায়ান লারা ৪০০* উইন্ডিজ ইংল্যান্ড ২০০৪
ম্যাথু হেইডেন ৩৮০ অস্ট্রেলিয়া জিম্বাবুয়ে ২০০৩
ব্রায়ান লারা ৩৭৫ উইন্ডিজ ইংল্যান্ড ১৯৯৪
জয়াবর্ধনে ৩৭৪ শ্রীলংকা দ. আফ্রিকা ২০০৬
গ্যারি সোবার্স ৩৬৫* উইন্ডিজ পাকিস্তান ১৯৫৮
লেন হাটন ৩৬৪ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া ১৯৩৮
সনাথ জয়সুরিয়া ৩৪০ শ্রীলংকা ভারত ১৯৯৭
হানিফ মোহাম্মদ ৩৩৭ পাকিস্তান উইন্ডিজ ১৯৫৮
ওয়ালি হ্যামন্ড ৩৩৬ ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ড ১৯৩৩
ডেভিড ওয়ার্নার ৩৩৫* অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তান ২০১৯